IQNA

হযরত ফাতিমা মাসূমার ( আ) শাহাদাত সম ওফাত বার্ষিকী

16:41 - October 26, 2023
সংবাদ: 3474563
তেহরান (ইকনা): আজ ১০ রবীউস সানী করীমা - ই আহলুল বাইত (আ) হযরত ফাতিমা বিনতে ইমাম মূসা ইবনে জাফারের ( আ ) শাহাদাত সম ওফাত দিবস। তিনি মহানবীর ( সা ) আহলুল বাইতের (আ) বারো পবিত্র ইমামের ৭ম মাসূম ইমাম মূসা ইবনে জাফারের (আ) কন্যা এবং ৮ম মাসূম ইমাম আলী ইবনে মূসার রিযার (আ) ভগ্নী এবং উখতুর রিযা ( রিযার ভগ্নী ) নামেও প্রসিদ্ধ । তিনি ২০১ হিজরীর ১০ রবীউস সানী তদানীন্তন পারস্যের ( অধুনা ইরান ) পবিত্র কোম নগরীতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তার শাহাদাত সম ওফাত উপলক্ষে ইমাম - ই যামান হযরত মাহদী এবং সকল মু'মিন ও মু'মিনাকে আন্তরিক শোক ও তাসলীয়াত।

ইরানে হযরত ইমাম রিযার আ ) আগমনের এক বছর পরে হযরত ফাতিমা মাসূমা (আ) নিজ ভ্রাতা ইমাম রিযার আ) দেখা করার জন্য আরো কয়েকজন ভাই বোন এবং কিছু নিকটাত্মীয়ের সাথে নিয়ে পারস্যে আগমন করেন । বলা হয়েছে যে হযরত মাসূমার কাফেলায় ২২ জন মতান্তরে ৪০০ জন ব্যক্তি ছিলেন যাদের মধ্য থেকে ২৩ জন সাভে অঞ্চলে আব্বাসীয় প্রশাসনের ভাড়াটে এজেন্টদের হামলায় শাহাদাত বরণ করেন।
পারস্যের সাভে অঞ্চলে হযরত ফাতিমা মাসূমার ( আ ) কাফেলা পৌঁছালে উক্ত অঞ্চলের আব্বাসীয় হুকূমতের সেনাবাহিনীর সাথে এই কাফেলার সংঘর্ষ হয় এবং এর ফলে কাফেলার বহু মানুষ হতাহত হন । আর এ সময় হযরত ফাতিমা মাসূমা অসুস্থ হয়ে পড়েন । তিনি খাদেমকে জিজ্ঞেস করেন : " এখান থেকে কোম কত দূরে ? " খাদেম আরয করে : " ১০ ফারসাখ । "
হযরত ফাতিমা বললেন : " আমাকে এখান থেকে কোমে নিয়ে যাও । " এই সময় কোমের একজন আশ'আরী ( আল - ই সা'দ ) গোত্র প্রধান এবং কোমের শিয়া মুসলমানদের নেতা মূসা ইবনে খাযরাজ হযরত ফাতিমা মাসূমার (আ) খেদমতে উপস্থিত হন এবং তাঁর উষ্ট্রীর রশি নিজ হাতে নিয়ে তাঁকে (আ) তার নিজ বাসভবনে নিয়ে আসেন ।
 
হযরত ফাতিমা মাসূমার (আ) অসুস্থ হওয়ার কারণ :
বেশ কিছু গবেষক বিশ্বাস করেন যে হযরত মাসূমা সাভে অঞ্চলে শত্রু প্রদত্ত বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ ও পীড়িত অবস্থায় কোমে আগমন করেন । কিছু দিন ( ১৭ বা ১৯ দিন )রোগ ভোগের পর তিনি শাহাদাত বরণ করেন । মুহাম্মদ মুহাম্মদী ইশতিহার্দী লিখেছেন : কতিপয় নাকল ও বর্ণনা মতে হযরত ফাতিমা মাসূমা (আ) সাভেতে এক মহিলা কর্তৃক বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিলেন ।
তবে কেউ কেউ বলেছেন যে যখন হযরত ফাতিমা মাসূমা (আ) তাঁর ২৩ জন ভাই ও ভ্রাতুস্পুত্রের ক্ষতবিক্ষত ও ছিন্ন ভিন্ন লাশ দেখতে পেলেন তখন তিনি খুবই মর্মাহত ও শোকাবিভূত ( গমগীন) হয়ে যান এবং এর ফলে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন ।
 
হযরত ফাতিমা মাসূমা (আ) ২৩ রবীউল আওয়াল কোম নগরীতে প্রবেশ করেন । তিনি ১৭ বা ১৯ দিন মূসা ইবনে খাযরাজের ভবনে মেহমান ছিলেন। এই ১৭ বা ১৯ দিন অসুস্থাবস্থায়ও সেখানে ইবাদত বন্দেগীতে মশগুল ছিলেন। 
 
রেহলাত :
প্রসিদ্ধ অভিমত হচ্ছে যে হযরত ফাতিমা মাসূমার ( আ) রেহলাত ২০১ হিজরীর রবীউস সানী মাসেই হয়েছিল। আলী আকবর মাহদীপূর লিখেছেন : " হযরত ফাতিমা মাসূমার (আ) রেহলাত দিবস ১০ রবীউস সানী ২০১ হিজরী । " 
কতিপয় গবেষক উল্লেখ করেছেন যে তাঁর ওফাত দিবস ১২ রবীউস সানী । মুহাম্মদী ইশতিহার্দী লিখেছেন : ইনসাফ হচ্ছে যে বিভিন্ন অভিমতের মাঝে সমন্বয় সাধন ( জাম' ) । আর তাই এ সুহান মহিয়সী নারীর শাহাদাত সম ওফাত উপলক্ষে ১০ , ১১ ও ১২ রবীউস সানী ( আইয়ামে মা'সূমীয়া ) শোকানুষ্ঠান ও আযাদারী পালন ।
 
দাফন :
হযরত ফাতিমা মাসূমার (আ) রেহলাত হলে আল - ই সা'দের মহিলারা তাঁর লাশ মুবারকের গোসল দেন ও কাফন পরান । অত:পর তাঁর পবিত্র জানাযা মূসা ইবনে খাযরাজের বাগানে ( বর্তমান হারাম - ই মুতাহহার ) বহন করে এনে দাফন ও সমাহিত করা হয় । এই সময় তাঁর লাশ মুবারক দাফন করার জন্য যে কারা উপযুক্ত এ নিয়ে আশ'আরীদের মধ্যে মতপার্থক্য দেখা দেয় । তখন হঠাৎ কোম নদীর দিক থেকে দু'জন অশ্বারোহী আগমন করে তাঁর লাশ মুবারকের কাছে এসে অশ্ব থেকে নামেন । তাঁরা প্রথমে তাঁর জানাযার নামায পড়েন । এরপর তাঁরা দুজনে মিলে হযরত ফাতিমা মাসূমার (আ) লাশ মুবারক কবরে সমাহিত করে কোন কথা না বলে সেখান থেকে প্রস্থান করেন । কতিপয় গবেষক এ সম্ভাবনা দিয়ে বলেছেন: এ দুজন অশ্বারোহীর একজন ছিলেন ইমাম রিযা ( আ ) এবং অপর জন ছিলেন ইমাম জাওয়াদ ( আ ) । 
(সূত্র : উইকি ফিকহ )
 
হযরত ফাতিমা মাসূমার (আ) মাযার শরীফ যিয়ারতের ফযীলত :
হযরত ফাতেমা বিনতে মূসা ইবনে জাফার ইবনে মোহাম্মদের মাযার কুম শহরে অবস্থিত। হযরত রেযা আলী ইবনে মূসা থেকে বর্ণিত আছে যে , যে ব্যক্তি তাঁর মাযার যিয়ারত করে, সে জান্নাতে দাখিল হবে । ( আল্লামা আব্দুর রহমান জামী প্রণীত শাওয়াহেদুন নবুওত , মাওলানা মুহিউদ্দীন খান অনূদিত, পৃ : ২৭২ )
امام صادق‏ عليه السلام:
 
إنَّ لَنا حَرَماً و هُوَ بَلَدَةُ قُمَّ و سَتُدفَنُ فيهَا امْرَأةٌ مِن أولادِي تُسَمّي فاطِمَةَ، فَمَن زارَها وَجَبَت لَهُ الجَنَّةُ؛
 
ইমাম সাদিক (আ) বলেছেন : আমাদের একটা হারাম ( সংরক্ষিত এলাকা) আছে এবং সেটা কোম নগরী । সেখানে ফাতিমা নাম্নী আমার এক বংশধর সমাহিত হবে । যে ব্যক্তি তাঁকে যিয়ারত করবে তার জন্য
বেহেশত ওয়াজিব ( অবধারিত ) হয়ে যাবে ।
সূত্র : বিহারুল আনওয়ার , খ : ৬০ , পৃ : ২১৬ 
আল - ইমাম জাওয়াদ ( আ ) বলেছেন : যে ব্যক্তি আমার ফুফুর কবর যিয়ারত করবে তার জন্য হবে  জান্নাত । ( দ্র: বিহারুল আনওয়ার , ৩ / ২৬৫ / ১০২ ) 
 الإمام الجواد - ع - : من زار قبر عمتي بقم فله الجنة .
সংগ্রহ ও অনুবাদ : ইসলামী চিন্তাবিদ এবং গবেষক হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলেমিন মুহাম্মদ মুনীর হুসাইন খান

 

captcha